
স্টাফ রিপোর্টারঃ নারায়ণগঞ্জ মহানগরের বন্দর উপজেলায় চলছে নিরব চাঁদাবাজি। উপজেলা বিএনপির ৪ নেতার চাঁদাবাজিতে অতিষ্ট হয়ে উঠেছে বন্দরের ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষজন। ৫ আগস্টের পর থেকে মিথ্যা হয়রানিমুলক মামলায় আসামী করা, আপোষ বানিজ্য, বিভিন্ন সেক্টর দখলসহ নানাবিধ বিতর্কিত কর্মকান্ডে জড়িয়ে বিএনপির এই ৪ নেতা কোটি টাকার মালিক বনে গেছে। এমন অভিযোগ করেছে বন্দরের ব্যবসায়ী ও সাধারন মানুষ।
বন্দরের স্থানীয়দের অভিযোগ- নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আওতাধীন বন্দর উপজেলা বিএনপির রাজনীতিতে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানের একমাত্র ভরসা এখন শাহিন আহমেদ ওরফে মোটা শাহিন। এক সময় জেলা জাতীয়পার্টির সহ-সভাপতি ও বন্দর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেনের কর্মী হিসেবে কাজ করত মোটা শাহিন। বিএনপির রাজনীতিতে শাহিন সক্রিয় হওয়ার পরেও বন্দরে মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ও গেল বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জাতীয়পার্টির মাকসুদ হোসেনের পক্ষে কাজ করেছে শাহিন। সেই শাহিনকে দিয়ে বন্দর উপজেলা নিয়ন্ত্রণ করেছে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান।
স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে, বন্দর উপজেলা পরিষদের গত নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হয় মাকসুদ হোসেন ও বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা আতাউর রহমান মুকুল। তখন নির্বাচনের পূর্বে এই শাহিনের মাধ্যমে সাখাওয়াতের দরবারে আসে মাকসুদ হোসেন। গত ৫ আগস্টের পরেও মাকসুদকে সাখাওয়াতের দরবারে নিয়ে যায় শাহিন। নির্বাচনের পূর্বে নারী গঠিত মামলায় মাকসুদের পক্ষে আইনি সহায়তাও দেয় সাখাওয়াত। ৫ আগস্টের পর ঐ নারীর সঙ্গে আপোসের ব্যবস্থাও করেছে সাখাওয়াত নিজে।
যদিও এসব কারনে সম্প্রতি গণমাধ্যমে বন্দর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাজহারুল ইসলাম হিরণ বলেছে, ‘শাহিন মুরগী ধরে সাখাওয়াতের কাছে নেয়, সাখাওয়াত সেই মুরগী জবাই করে।’ এর আগে ২৭নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ফারুক হোসেনকেও সাখাওয়াতের দরবারে নিয়ে আসে শাহিন। ফারুককে নিয়ে এখন বিএনপির মিটিং মিছিলে আসছে শাহিন। জাতীয়পার্টির লোকজনকে ধরে ধরে বিএনপি বানাচ্ছে মোটা শাহিন।
সূত্রমতে, ২০২২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর মহানগর বিএনপির কমিটিতে শাহিনকে সদস্য পদে রাখে সাখাওয়াত। এ নিয়ে কঠোর সমালোচনার মুখে পড়ে সাখাওয়াত। গত ২০২৩ সালের ১৩ জুন উপজেলা বিএনপির সম্মেলনে শাহিনকে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী করে সাখাওয়াত। কিন্তু শাহিন পরাজিত হয়। এর আগে শাহিনকে মুছাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বানায় মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক।
সম্প্রতি শাহিন আহমেদকে নিয়ে ৪৩ জন নেতাকর্মীর স্বাক্ষর নিয়ে বন্দর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাজহারুল ইসলাম হিরণ ও সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ লিটনের বিরুদ্ধে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বরাবর লিখিত অভিযোগ দেয়ায় সাখাওয়াত। তারপর থেকে হিরন ও লিটন সাখাওয়াতের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে বক্তব্য দিতে থাকে। এরপর সম্প্রতি হিরন ও লিটনের বহিষ্কার দাবিতে এবং সাখাওয়াতের প্রতি ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়ে জাতীয়পার্টি ঘেষা শাহিন ও আওয়ামীঘেষা মোহসীন মিয়া সংবাদ সম্মেলন করে। এর মাস খানিক পূর্বে শাহিন গ্রুপ হিরন ও লিটনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিলও করেছিল।
মূলত বন্দর উপজেলায় গত ৫ আগস্টের পর বিভিন্ন সেক্টর শাহিনকে দিয়ে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে সাখাওয়াত। কিন্তু হিরন ও লিটন নিজেরা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে অধিকাংশ সেক্টর। এ নিয়ে বিএনপির দুই গ্রুপের মাঝে বিরোধ সৃষ্টি হয়।
এদিকে, গত ১ ডিসেম্বর ধামগড় ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জাহিদ খন্দকার ও মুছাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি তাঁরা মিয়া জহিদ্দার বিলে মাকসুদের বোন পরিচয়দানকারী লাভলী মেম্বার ও তার স্বামী আমান উল্লাহর সেচ প্রকল্পের দখলে যায়। কিন্তু আগেই সাখাওয়াতকে ম্যানেজ করে লাভলী মেম্বার ও আমান উল্লাহ প্রকল্পের কাজ চালিয়ে গেলেও দখল করার চেষ্টা করতে থাকে জাহিদ ও তাঁরা মিয়া। ১ ডিসেম্বর চাঁদা দাবিতে দখলে গেলে মাকসুদের লোকজন জাহিদ খন্দকার ও তাঁরা মিয়াকে পিটিয়ে পুকুরের পানিতে ফেলে চুবিয়েছে। পেছনে সমর্থন যুগিয়েছে সাখাওয়াত অনুগামী শাহিন, মোহসীন ও তাওলাদ হোসেনরা।
অপরদিকে, গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর বন্দরে নূর হোসেনের কাছে ৩ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে বন্দরের যুবদল নেতা সম্রাট হাসান সুজন। ঐ দিন বিকেলে মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু বন্দরে গেলে তাকে লাঞ্ছিত করে নূর হোসেনসহ তার লোকজন। পরবর্তীতে সম্রাট হাসান সুজনসহ চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে নূর হোসেনের ভাই শাহাদাত হোসেন কোর্টে চাঁদাবাজির মামলাও দায়ের করেছে।
Reporter Name 















