Dhaka 11:06 pm, Wednesday, 12 November 2025

বৈষম্যবিরোধী হত্যার ১ ঘটনায় ৩ থানায় ৩ মামলা,বাদী কোটিপতি

  • Reporter Name
  • Update Time : 11:39:46 am, Saturday, 19 July 2025
  • 126 Time View

 

ফাহাদুল ইসলাম : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় নারায়ণগঞ্জে মাদরাসা ছাত্র মো.ইব্রাহিম (১৩) হত্যা ঘটনায় তিন থানায় পৃথক পৃথক মামলা হয়েছে। নিহতের বাবা-মাকে মৃত দেখিয়ে কথিত মামা বাদী হয়ে ফতুল্লা থানায় ১ম হত্যা মামলাটি দায়ের করেন। এর কিছুদিন পর একই ঘটনায় নিহতের বাবা মো.হানিফ বাদী হয়ে কাঁচপুর স্থান দেখিয়ে সোনারগাঁ থানায় দ্বিতীয়বার মামলাটি দায়ের করেন। জুলাই মাসের ১১ তারিখে একই ঘটনায় মো.হানিফ মিয়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কস্থ শনির আখড়া ব্রীজের পশ্চিমপাশ স্থান দেখিয়ে,২০৯ জন কে এজাহার নামীয় আসামী ও ২০০০ থেকে ৩০০০ জনকে অজ্ঞাত করে আবারও যাত্রাবাড়ি থানায় হত্যা মামলা করেন।

এ নিয়ে বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। উল্লেখ্য যে,বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়ে নিহত ইব্রাহিমের বাবা হানিফ মিয়া ও মা সখিনা বিবি কে মৃত দেখিয়ে তার মামা পরিচয়ে মো.সাইফুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি গত ২২ আগস্ট ফতুল্লা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা,সাবেক সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান,মানবজমিন পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার ও বেসরকারি টেলিভিশন এনটিভির জেলা প্রতিনিধি বিল্লাল হোসেন রবিন,আইনজীবী কামাল হোসেন সহ ৬১ জনকে নামীয় আসামি করা হয়। এছাড়া আরও অজ্ঞাত ১৫০-১৬০ জনকে আসামি করা হয়। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত ১৯ জুলাই শুক্রবার বিকাল আনুমানিক ৩ টার দিকে কোটা বিরোধী দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ছাত্র-জনতা ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রোডের পাসপোর্ট অফিসের বিপরীত পাশে শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করতে সমবেত হলে আসামিরা আগ্নেয়াস্ত্র সহ বিভিন্ন দেশিয় অস্ত্র নিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে এলোপাথারি গুলি করে ও ককটেল বিস্ফোরণ করে।
এ সময় আমি ও আমার ভাগিনা মোহাম্মদ ইব্রাহিম (১৩) ভয়ে একটি দোকানের আড়ালে আশ্রয় নেই। হঠাৎ আমার ভাগিনা ইব্রাহিমের মাথায় ও বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরের দিন ২০ জুলাই মাগরিবের নামাজের পূর্বে মাতুআইল কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়। নিহতের বাবা মো.হানিফ দায়েরকৃত সোনারগাঁ থানায় মামলার এজাহারে বলা হয়েছে,গত ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে পন্ড করার জন্য সোনারগাঁয়ের কাঁচপুর ব্রীজের পূর্ব ঢাল হতে ১৪ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিম দিকে অস্ত্র নিয়ে আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী হামলা চালিয়ে এলোপাথারি গুলি ছুড়ে ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। বিকেল আনুমানিক সাড়ে ৩ টার দিকে ইব্রাহিমের বাম চোখের ভেতরে ঢুকে মাথায় পেছনের অংশ দিয়ে গুলি বের হয়ে যায়। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতালে নেওয়া হলে তার মৃত্যু হয়। এই মামলায় কোর্টে দাড়িয়ে এফিটডেভিড এর মাধ্যমে ২৩৫ আসামীর মধ্যে প্রায় দেড়শত আসামীর নাম কর্তন করা হয়েছে। এফিটডেভিডের মাধ্যমে নাম কর্তন করতে জন প্রতি পঞ্চাশ হাজার থেকে শুরু করে এক লাখ পর্যন্ত টাকা নিয়েছে নিহত ইব্রাহীম এর বাবা বাদী মো.হানিফ। টাকার লোভে পড়ে গত ১১ জুলাই কিছু আসামি সংযোজন,বিয়োজন করে একই ঘটনায় আবারও যাত্রাবাড়ি থানায় মামলা দায়ের করেন মো.হানিফ। এতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা,রাজনীতিবিদ,সাংবাদিক ও সাধারণ মানুষ সহ ২০৯ জন এজাহার নামীয় আসামী ও অজ্ঞাত আরো ২০০০ থেকে ৩০০০ জনকে মামলার আসামি করা হয়। ফতুল্লা থানার মামলার বাদী ও নিহত ইব্রাহিমের কথিত মামা সাইফুল ইসলাম বলেন,নিহত ইব্রাহিম আমার বাড়ির পাশে কাজ করতো ও মাদ্রসায় পড়াশোনা করতো। সে আমার আপন ভাগিনা না। তার হত্যার ঘটনার পর রাজনীতিক মামলা হয়েছে। যারা আন্দোলন করেছে তারাই মামলার সবকিছু করেছে,আমি শুধু স্বাক্ষর দিয়েছি। আসামিদের কাউকে আমি চিনি না। এদিকে একই ঘটনায় নিহত মো.ইব্রাহিম (১৩) এর বাবা মো.হানিফ (৬৫) বাদী হয়ে গত ২৪ আগস্ট সোনারগাঁ থানায়,১১জুলাই যাত্রাবাড়ী থানায় আরেকটি হত্যা মামলার বিষয়ে জানার জন্য যোগাযোগ করেও পাওয়া যায়নি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

বৈষম্যবিরোধী হত্যার ১ ঘটনায় ৩ থানায় ৩ মামলা,বাদী কোটিপতি

Update Time : 11:39:46 am, Saturday, 19 July 2025

 

ফাহাদুল ইসলাম : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় নারায়ণগঞ্জে মাদরাসা ছাত্র মো.ইব্রাহিম (১৩) হত্যা ঘটনায় তিন থানায় পৃথক পৃথক মামলা হয়েছে। নিহতের বাবা-মাকে মৃত দেখিয়ে কথিত মামা বাদী হয়ে ফতুল্লা থানায় ১ম হত্যা মামলাটি দায়ের করেন। এর কিছুদিন পর একই ঘটনায় নিহতের বাবা মো.হানিফ বাদী হয়ে কাঁচপুর স্থান দেখিয়ে সোনারগাঁ থানায় দ্বিতীয়বার মামলাটি দায়ের করেন। জুলাই মাসের ১১ তারিখে একই ঘটনায় মো.হানিফ মিয়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কস্থ শনির আখড়া ব্রীজের পশ্চিমপাশ স্থান দেখিয়ে,২০৯ জন কে এজাহার নামীয় আসামী ও ২০০০ থেকে ৩০০০ জনকে অজ্ঞাত করে আবারও যাত্রাবাড়ি থানায় হত্যা মামলা করেন।

এ নিয়ে বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। উল্লেখ্য যে,বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়ে নিহত ইব্রাহিমের বাবা হানিফ মিয়া ও মা সখিনা বিবি কে মৃত দেখিয়ে তার মামা পরিচয়ে মো.সাইফুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি গত ২২ আগস্ট ফতুল্লা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা,সাবেক সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান,মানবজমিন পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার ও বেসরকারি টেলিভিশন এনটিভির জেলা প্রতিনিধি বিল্লাল হোসেন রবিন,আইনজীবী কামাল হোসেন সহ ৬১ জনকে নামীয় আসামি করা হয়। এছাড়া আরও অজ্ঞাত ১৫০-১৬০ জনকে আসামি করা হয়। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত ১৯ জুলাই শুক্রবার বিকাল আনুমানিক ৩ টার দিকে কোটা বিরোধী দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ছাত্র-জনতা ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রোডের পাসপোর্ট অফিসের বিপরীত পাশে শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করতে সমবেত হলে আসামিরা আগ্নেয়াস্ত্র সহ বিভিন্ন দেশিয় অস্ত্র নিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে এলোপাথারি গুলি করে ও ককটেল বিস্ফোরণ করে।
এ সময় আমি ও আমার ভাগিনা মোহাম্মদ ইব্রাহিম (১৩) ভয়ে একটি দোকানের আড়ালে আশ্রয় নেই। হঠাৎ আমার ভাগিনা ইব্রাহিমের মাথায় ও বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরের দিন ২০ জুলাই মাগরিবের নামাজের পূর্বে মাতুআইল কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়। নিহতের বাবা মো.হানিফ দায়েরকৃত সোনারগাঁ থানায় মামলার এজাহারে বলা হয়েছে,গত ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে পন্ড করার জন্য সোনারগাঁয়ের কাঁচপুর ব্রীজের পূর্ব ঢাল হতে ১৪ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিম দিকে অস্ত্র নিয়ে আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী হামলা চালিয়ে এলোপাথারি গুলি ছুড়ে ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। বিকেল আনুমানিক সাড়ে ৩ টার দিকে ইব্রাহিমের বাম চোখের ভেতরে ঢুকে মাথায় পেছনের অংশ দিয়ে গুলি বের হয়ে যায়। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতালে নেওয়া হলে তার মৃত্যু হয়। এই মামলায় কোর্টে দাড়িয়ে এফিটডেভিড এর মাধ্যমে ২৩৫ আসামীর মধ্যে প্রায় দেড়শত আসামীর নাম কর্তন করা হয়েছে। এফিটডেভিডের মাধ্যমে নাম কর্তন করতে জন প্রতি পঞ্চাশ হাজার থেকে শুরু করে এক লাখ পর্যন্ত টাকা নিয়েছে নিহত ইব্রাহীম এর বাবা বাদী মো.হানিফ। টাকার লোভে পড়ে গত ১১ জুলাই কিছু আসামি সংযোজন,বিয়োজন করে একই ঘটনায় আবারও যাত্রাবাড়ি থানায় মামলা দায়ের করেন মো.হানিফ। এতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা,রাজনীতিবিদ,সাংবাদিক ও সাধারণ মানুষ সহ ২০৯ জন এজাহার নামীয় আসামী ও অজ্ঞাত আরো ২০০০ থেকে ৩০০০ জনকে মামলার আসামি করা হয়। ফতুল্লা থানার মামলার বাদী ও নিহত ইব্রাহিমের কথিত মামা সাইফুল ইসলাম বলেন,নিহত ইব্রাহিম আমার বাড়ির পাশে কাজ করতো ও মাদ্রসায় পড়াশোনা করতো। সে আমার আপন ভাগিনা না। তার হত্যার ঘটনার পর রাজনীতিক মামলা হয়েছে। যারা আন্দোলন করেছে তারাই মামলার সবকিছু করেছে,আমি শুধু স্বাক্ষর দিয়েছি। আসামিদের কাউকে আমি চিনি না। এদিকে একই ঘটনায় নিহত মো.ইব্রাহিম (১৩) এর বাবা মো.হানিফ (৬৫) বাদী হয়ে গত ২৪ আগস্ট সোনারগাঁ থানায়,১১জুলাই যাত্রাবাড়ী থানায় আরেকটি হত্যা মামলার বিষয়ে জানার জন্য যোগাযোগ করেও পাওয়া যায়নি।