Dhaka 6:52 am, Friday, 7 November 2025

ব্যবসায়ীদের মামলা দিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ ঘরবাড়ি দখল

  • Reporter Name
  • Update Time : 04:37:38 am, Monday, 14 October 2024
  • 134 Time View

 

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর হতাহতের ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানায় ৬টি মামলা হয়েছে। সিদ্ধিরগঞ্জের মাদানীনগর ও ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় সংঘর্ষে নিহত ও আহত হওয়ার ঘটনায় সোনারগাঁয়ের কাঁচপুর ব্রিজের ঢালে ঘটনাস্থল দেখিয়ে এসব মামলা করা হয়। সব মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এছাড়া আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, সাধারণ ব্যবসায়ী ও দিনমজুরসহ নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা দেখিয়ে আরও প্রায় ৪ হাজার মানুষকে আসামি করা হয়েছে।

এসব ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ মামলার নেপথ্য কারিগর সোনারগাঁয়ের বিএনপি নেতা আজহারুল ইসলাম মান্নান। নিরাপরাধ মানুষদের মামলা দিয়ে বাড়িছাড়া করে তাদের ঘরবাড়ি দখল, ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল করা হয়েছে। এ ছাড়া ইকোনোমিক জোনে যারা আগে ব্যবসা করত তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে জুটসহ নানা ব্যবসা জোরপূর্বক করে যাচ্ছে মান্নানের ছেলে খাইরুল ইসলাম সজীব, উপজেলার দত্তপাড়া গ্রামের বিএনপি নেতা মোশারফ, পরিবহন চাদাবাজ নিজামুদ্দিন, বাবুল ও শামীম। পিরোজপুর এলাকায় নীরিহ মানুষের জমি দখল করে নিচ্ছে মান্নানপন্থি বিএনপি নেতা মেনা, বারদী এলাকার রহমানসহ বিশাল বাহিনী। ক্লিন ইমেজের বিএনপি নেতাকর্মীদের যাদের মান্নান তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ মনে করছে, তাদেরও এসব মিথ্যা মামলায় আসামি করছে বলে জানা যায়। এসব মামলায় আসামি করার ভয় দেখিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হইয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গিয়াছে। আবার পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সোনারগাঁও ইকোনোমিক জোনে সিন্ডিকেট করে হাজার কোটি টাকা কামানো ইঞ্জিয়ার মাসুমকে আসামি করার পর কয়েক কোটি টাকা নিয়ে বাদীকে দিয়ে মামলা থেকে নাম বাদ দেওয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এভাবে টাকা নিয়ে আরও অনেককেই মামলা থেকে বাদ দিয়েছে আজহারুল ইসলাম মান্নান ও তার বাহিনী।

এসব কারণে সোনারগাঁয়ে বিএনপি বর্তমানে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এক অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছে সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান এবং অন্য অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছে সাবেক মন্ত্রী অধ্যাপক রেজাউল করিম। মূলত মান্নানপন্থিরাই জড়িয়ে পড়েছে হামলা-মামলা ও বাড়িঘর লুটপাটে।

স্থানীয় স্কুল শিক্ষক বলে, আজহারুল ইসলাম মান্নান এক সময় অধ্যাপক রেজাউল করিমের একজন সাধারণ কর্মী ছিল। একটি আবাসন প্রতিষ্ঠানের দালালি করে রাতারাতি কোটিপতি বনে যায় মান্নান। এরপরই বিশাল ক্যাডার বাহিনী গড়ে তোলে।

গত ৭ আগস্ট মান্নানের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী পিরোজপুর ইউনিয়নের প্রতাবেরচর এলাকায় সাবেক মহিলা মেম্বার মমতাজ বেগমের পরিবারের লোকজনকে পিটিয়ে বাড়ি থেকে বের করে তার ভবনসহ জায়গা-জমি জবর-দখল করে নিয়ে যায়। এ ব্যপারে সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে গিয়ে অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগী। ৫ আগস্ট মেঘনা টোল প্লাজা থেকে টোলের কয়েক কোটি টাকা ছিনিয়ে নিয়ে গেছে মান্নানের ছেলে জেলা যুবদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক খাইরুল ইসলাম সজীবের অনুসারিরা।

বর্তমানে সোনারগাঁয়ে আজহারুল ইসলাম মান্নান ও তার বাহিনী মূর্তিমান আতঙ্ক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। তার বাহিনী প্রতাবেরচর গ্রামের মিন্টু, ঝাউচর গ্রামের আল আমিনের বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করে। মান্নানের ভয়ে প্রতাবেরচর, ঝাউচর ও আষাড়িয়ারচর গ্রামের বড় বড় ব্যবসায়ীরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে। এ নিয়ে থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর সোনারগাঁয়ের মোগরাপাড়া ইউনিয়নে শীলমান্দি ও পিরোজপুর ইউনিয়নের মেঘনাঘাটে অবস্থিত ৩টি ইকোনমিক জোনসহ ৩৮টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে মান্নান ও তার ভাই হান্নানসহ তার আত্মীয়-স্বজনরা।

অভিযোগ রয়েছে, সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সভাপতি মান্নানের নেতৃত্বে প্রতিদিন শতাধিক লোক চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে সচেতনামূলক প্রচার চালালেও সন্ধ্যা নামতেই ভোল পাল্টে যায় তাদের। মোগরাপাড়া চৌরাস্তা এলাকার ফুটপাতের সব দোকান ও পরিবহণ থেকে শুরু হয় চাঁদা তোলা। সোনারগাঁয়ের ১০টি ইউপির অধিকাংশ জনপ্রতিনিধি আওয়ামী লীগ ঘরানার হওয়ায় তাদেরকে প্রথমে হত্যা মামলার আসামি করা হয়। পরে তাদের অনুপস্থিত দেখিয়ে শূন্য স্থানে মান্নান তার পছন্দের জনপ্রতিনিধিদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসাবে সুপারিশ করে টাকার বিনিময়ে। তার বাহিনী সোনারগাঁজুড়ে সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও দখলের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন এলাকাবাসী এই প্রতিবেদকের কাছে অভিযোগ করে।

এ ব্যাপারে সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নানকে ফোন দিলে মান্নান ফোন না ধরে কেটে দেয়।

 

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

ব্যবসায়ীদের মামলা দিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ ঘরবাড়ি দখল

Update Time : 04:37:38 am, Monday, 14 October 2024

 

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর হতাহতের ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানায় ৬টি মামলা হয়েছে। সিদ্ধিরগঞ্জের মাদানীনগর ও ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় সংঘর্ষে নিহত ও আহত হওয়ার ঘটনায় সোনারগাঁয়ের কাঁচপুর ব্রিজের ঢালে ঘটনাস্থল দেখিয়ে এসব মামলা করা হয়। সব মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এছাড়া আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, সাধারণ ব্যবসায়ী ও দিনমজুরসহ নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা দেখিয়ে আরও প্রায় ৪ হাজার মানুষকে আসামি করা হয়েছে।

এসব ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ মামলার নেপথ্য কারিগর সোনারগাঁয়ের বিএনপি নেতা আজহারুল ইসলাম মান্নান। নিরাপরাধ মানুষদের মামলা দিয়ে বাড়িছাড়া করে তাদের ঘরবাড়ি দখল, ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল করা হয়েছে। এ ছাড়া ইকোনোমিক জোনে যারা আগে ব্যবসা করত তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে জুটসহ নানা ব্যবসা জোরপূর্বক করে যাচ্ছে মান্নানের ছেলে খাইরুল ইসলাম সজীব, উপজেলার দত্তপাড়া গ্রামের বিএনপি নেতা মোশারফ, পরিবহন চাদাবাজ নিজামুদ্দিন, বাবুল ও শামীম। পিরোজপুর এলাকায় নীরিহ মানুষের জমি দখল করে নিচ্ছে মান্নানপন্থি বিএনপি নেতা মেনা, বারদী এলাকার রহমানসহ বিশাল বাহিনী। ক্লিন ইমেজের বিএনপি নেতাকর্মীদের যাদের মান্নান তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ মনে করছে, তাদেরও এসব মিথ্যা মামলায় আসামি করছে বলে জানা যায়। এসব মামলায় আসামি করার ভয় দেখিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হইয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গিয়াছে। আবার পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সোনারগাঁও ইকোনোমিক জোনে সিন্ডিকেট করে হাজার কোটি টাকা কামানো ইঞ্জিয়ার মাসুমকে আসামি করার পর কয়েক কোটি টাকা নিয়ে বাদীকে দিয়ে মামলা থেকে নাম বাদ দেওয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এভাবে টাকা নিয়ে আরও অনেককেই মামলা থেকে বাদ দিয়েছে আজহারুল ইসলাম মান্নান ও তার বাহিনী।

এসব কারণে সোনারগাঁয়ে বিএনপি বর্তমানে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এক অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছে সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান এবং অন্য অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছে সাবেক মন্ত্রী অধ্যাপক রেজাউল করিম। মূলত মান্নানপন্থিরাই জড়িয়ে পড়েছে হামলা-মামলা ও বাড়িঘর লুটপাটে।

স্থানীয় স্কুল শিক্ষক বলে, আজহারুল ইসলাম মান্নান এক সময় অধ্যাপক রেজাউল করিমের একজন সাধারণ কর্মী ছিল। একটি আবাসন প্রতিষ্ঠানের দালালি করে রাতারাতি কোটিপতি বনে যায় মান্নান। এরপরই বিশাল ক্যাডার বাহিনী গড়ে তোলে।

গত ৭ আগস্ট মান্নানের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী পিরোজপুর ইউনিয়নের প্রতাবেরচর এলাকায় সাবেক মহিলা মেম্বার মমতাজ বেগমের পরিবারের লোকজনকে পিটিয়ে বাড়ি থেকে বের করে তার ভবনসহ জায়গা-জমি জবর-দখল করে নিয়ে যায়। এ ব্যপারে সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে গিয়ে অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগী। ৫ আগস্ট মেঘনা টোল প্লাজা থেকে টোলের কয়েক কোটি টাকা ছিনিয়ে নিয়ে গেছে মান্নানের ছেলে জেলা যুবদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক খাইরুল ইসলাম সজীবের অনুসারিরা।

বর্তমানে সোনারগাঁয়ে আজহারুল ইসলাম মান্নান ও তার বাহিনী মূর্তিমান আতঙ্ক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। তার বাহিনী প্রতাবেরচর গ্রামের মিন্টু, ঝাউচর গ্রামের আল আমিনের বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করে। মান্নানের ভয়ে প্রতাবেরচর, ঝাউচর ও আষাড়িয়ারচর গ্রামের বড় বড় ব্যবসায়ীরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে। এ নিয়ে থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর সোনারগাঁয়ের মোগরাপাড়া ইউনিয়নে শীলমান্দি ও পিরোজপুর ইউনিয়নের মেঘনাঘাটে অবস্থিত ৩টি ইকোনমিক জোনসহ ৩৮টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে মান্নান ও তার ভাই হান্নানসহ তার আত্মীয়-স্বজনরা।

অভিযোগ রয়েছে, সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সভাপতি মান্নানের নেতৃত্বে প্রতিদিন শতাধিক লোক চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে সচেতনামূলক প্রচার চালালেও সন্ধ্যা নামতেই ভোল পাল্টে যায় তাদের। মোগরাপাড়া চৌরাস্তা এলাকার ফুটপাতের সব দোকান ও পরিবহণ থেকে শুরু হয় চাঁদা তোলা। সোনারগাঁয়ের ১০টি ইউপির অধিকাংশ জনপ্রতিনিধি আওয়ামী লীগ ঘরানার হওয়ায় তাদেরকে প্রথমে হত্যা মামলার আসামি করা হয়। পরে তাদের অনুপস্থিত দেখিয়ে শূন্য স্থানে মান্নান তার পছন্দের জনপ্রতিনিধিদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসাবে সুপারিশ করে টাকার বিনিময়ে। তার বাহিনী সোনারগাঁজুড়ে সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও দখলের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন এলাকাবাসী এই প্রতিবেদকের কাছে অভিযোগ করে।

এ ব্যাপারে সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নানকে ফোন দিলে মান্নান ফোন না ধরে কেটে দেয়।