Dhaka 10:52 pm, Wednesday, 12 November 2025

নার্গিস চৌধুরীর স্বরচিত কবিতা “এই স্মৃতি কেমনে ভুলি!”

  • Reporter Name
  • Update Time : 07:54:09 am, Saturday, 12 April 2025
  • 357 Time View

এই স্মৃতি কেমনে ভুলি!!
——– নার্গিস চৌধুরী

“শহীদ আবু সাঈদ” কতোটা কষ্ট পেলে মানুষ দু’হাত দুই দিকে বাড়িয়ে,বুক পেতে বলতে পারে
আর কাউকে নয়, আমাকে গুলি করা হোক,
তাও জালিমের হাত থেকে দেশ, শান্তিময় হোক।

প্রথম যখন গুলিটি এলো, পেটের ডান পাশ দিয়ে গেলো,
তবু সহযোদ্ধাদের বুঝতে দিলো না,আবার বুক পেতে দাঁড়ালো।
দ্বিতীয় তে যখন গুলি খেলো তখনও সহযোদ্ধাদের বুঝতে দিলো না, আবারও বুক পেতে দাঁড়ালো।

কর্ গুলি কর্ যতো পারিস গুলি কর্ ওরে খুনি স্বৈরাচার,
আমার প্রাণের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হোক
এবার তুই গদি ছাড়?

তৃতীয় গুলিটা যখন পেটের মাঝখানে লাগে,
হাত থেকে ছোট্ট লাঠি টা ফেলে দিয়ে আবু সাঈদ ,
একটু সরে বসে সহযোদ্ধাদের বুঝাচ্ছিলো,
যেন সে এখন জিরিয়ে নিচ্ছে।

তিন তিনটি গুলি খেয়েও, তাঁর অন্য সহযোদ্ধাদের বুঝতে দিতে চায় নায় যে তাঁর কষ্ট হচ্ছে।

গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যাওয়া পেট দেখে সহযোদ্ধাদের বুঝতে আর বাকি রইল না,
যেনো আবু সাঈদ বলছে–আমি না থাকলেও ঘরে ফিরবে না স্বাধীনতা ছাড়া।

রক্ত টপটপ করে পেট থেকে নীচে গড়িয়ে পড়ছে,
মাথাটা যখনই মাটিতে লুটিয়ে পড়ছে।

সবুজ শার্ট পরা সহযোদ্ধা হাতে তরিঘরি আবু সাঈদ কে ধরে ফেলে যেন মাটিতে না পড়ে,

সঙ্গে সঙ্গে আরো চার পাঁচ জন সহযোদ্ধা এসে
দু’জনে দুপায়ে আরো দু’জন দু’হাতে এবং একজন মাথা ধরে নিয়ে যায় হসপিটালে,
ততক্ষণে তাঁর শরীর হয়ে যায় নিথর।

সহযোদ্ধা দের রাগ আরো যায় বেড়ে,
স্বাধীন না করে ফিরলে ঘরে,
বেঈমানি হবে আবু সাঈদ এর দেহের।

হ্যাঁ স্বাধীনতা নিয়েই ঘরে ফিরেছে তাঁর বন্ধুরা,
কষ্ট শুধু একটায় ঘরে ফিরতে হলো তাঁকে ছাড়া।।

ভাবতে অবাক লাগলেও এ’টায় সত্য যে “আবু সাঈদ”কষ্টের চিৎকারটুকু পর্যন্ত দেয় নায়!

তাঁর বুকে গুলি লেগে রক্ত গড়িয়ে পড়ছিলো, তবুও কাউকে সে বুঝাতে পর্যন্ত দেয় নায়।
কারণ একটাই -দেশ স্বাধীন চাই ।।

কি এক কষ্টের আগুন বহিতে ছিলো তাঁর বুকে,

এই তিনটি গুলিতে ঝাঝড়া হয়ে যাওয়ার চেয়েও যে স্বৈরাচারের জুলুম নির্যাতন এবং বাংলাদেশের মানুষের পরাধীনতার কষ্ট,
স্বাধীন ভাবে কথা বলার আতঙ্ক,
ভাষা যেখানে থমকে যাওয়ার পথে,
দেশে কাজ না পেয়ে অন্য দেশে পাড়ি দিচ্ছে মেধাবীরা ভিটে মাটি বিক্রি করে।

যদি এর প্রতিবাদ না করে আজ জুলুম অত্যাচার মেনে নিয়ে ঘরে ফিরে—তবে কেন মাঠে নেমেছে ?

প্রাণে ছিল ধীর্হ বিশ্বাস ,
মরে গিয়ে হলেও ফিরবে সে স্বাধীনতা নিয়ে।

একাত্তরের স্বাধীনতা দেখিনি, তবে শুনেছি, ইতিহাস পড়েছি,
এতো অল্প দিনে কোনো দেশে,
কোনো স্বাধীন দেশের সরকার এতো মানুষকে হত্যা করেছে,
কোথাও কোন ইতিহাসে খুঁজে পাইনি।

গুলি চালাও চালাও আরো গুলি,
রক্তের বন্যাতে পবিত্র হোক ধুলি।।

কেন “আবু সাঈদ” এভাবে বুক পেতে দাঁড়ালো?

কারণ একটাই, এই খুনি স্বৈরাচার হাসিনা সরকারকে নীজের জীবনের বিনিময়ে হলেও হঠাতে হবে।

এই কঠিন সত্য ইঙ্গিত টুকু,
“আবু সাঈদ”এর মনের কথা বুঝতে আর বাকি রইলো না বাঙালির।

স্বাধীন হবেই এদেশ,
“তোমরা থামবেনা”আমার জীবন উৎসর্গ করলাম, স্বাধীনতার জন্য ,—আমার জীবনের বিনিময়ে”।।

———আমি এখানে লক্ষ করলাম শহীদ আবু সাঈদ কালো সার্ট আর কালো পেন্ট পড়ে ছিলো বলে, লাল রক্ত অন্য কেউ দেখতে পাচ্ছিল না। কারণ লাল রং কালোতে বুঝতে পারা যায় না এবং সে যে গুলিবিদ্ধ হয়েছে এটাও কাউকে সে বুঝাতেও চাচ্ছিলো না।

কি এক কঠিন কষ্ট বুকে চাঁপা দিয়ে টিকতে না পেরে যখন সে লুটিয়ে পড়লো,
তার আগ পর্যন্ত কাউকেই সে বুঝতে দিতে চাই নায়!

আমাদের সামনে এতো বড় কঠিন বাস্তব জীবন ত্যাগ!
একাত্তরে হয়েছিলো হয়তবা কিন্তু আমরা চোখে দেখিনি।

এই দুই হাজার চব্বিশে আমাদের চোখের সামনে যা দেখেছি তা মনে হলেই গা শিউরে ওঠে!!

এখন ছাত্রদের কোঠা ঠিক হয়েছে, বাজারের খাদ্য দ্রব্য স্থিতিশীল হয়েছে, কথাবলার বাক্ স্বাধীন হয়েছে, মারো – ধরো – পাক রাও বন্ধ হয়েছে।

ও আল্লাহ তায়ালা, বাংলাদেশের আঠারো কোটি মানুষ শুখে থাকার জন্য, স্বৈরাচার খুনি সরকার থেকে বাঁচাতে বাঙালি স্বাধীন কারি শহীদ আবু সাঈদ কে যেন জান্নাতুল ফেরদৌস দান করো,

হে আল্লাহ, বাংলাদেশের আঠারো কোটি মানুষের আকুতি গ্রহণ করো। তুমি মহান ❤️

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

নার্গিস চৌধুরীর স্বরচিত কবিতা “এই স্মৃতি কেমনে ভুলি!”

Update Time : 07:54:09 am, Saturday, 12 April 2025

এই স্মৃতি কেমনে ভুলি!!
——– নার্গিস চৌধুরী

“শহীদ আবু সাঈদ” কতোটা কষ্ট পেলে মানুষ দু’হাত দুই দিকে বাড়িয়ে,বুক পেতে বলতে পারে
আর কাউকে নয়, আমাকে গুলি করা হোক,
তাও জালিমের হাত থেকে দেশ, শান্তিময় হোক।

প্রথম যখন গুলিটি এলো, পেটের ডান পাশ দিয়ে গেলো,
তবু সহযোদ্ধাদের বুঝতে দিলো না,আবার বুক পেতে দাঁড়ালো।
দ্বিতীয় তে যখন গুলি খেলো তখনও সহযোদ্ধাদের বুঝতে দিলো না, আবারও বুক পেতে দাঁড়ালো।

কর্ গুলি কর্ যতো পারিস গুলি কর্ ওরে খুনি স্বৈরাচার,
আমার প্রাণের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হোক
এবার তুই গদি ছাড়?

তৃতীয় গুলিটা যখন পেটের মাঝখানে লাগে,
হাত থেকে ছোট্ট লাঠি টা ফেলে দিয়ে আবু সাঈদ ,
একটু সরে বসে সহযোদ্ধাদের বুঝাচ্ছিলো,
যেন সে এখন জিরিয়ে নিচ্ছে।

তিন তিনটি গুলি খেয়েও, তাঁর অন্য সহযোদ্ধাদের বুঝতে দিতে চায় নায় যে তাঁর কষ্ট হচ্ছে।

গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যাওয়া পেট দেখে সহযোদ্ধাদের বুঝতে আর বাকি রইল না,
যেনো আবু সাঈদ বলছে–আমি না থাকলেও ঘরে ফিরবে না স্বাধীনতা ছাড়া।

রক্ত টপটপ করে পেট থেকে নীচে গড়িয়ে পড়ছে,
মাথাটা যখনই মাটিতে লুটিয়ে পড়ছে।

সবুজ শার্ট পরা সহযোদ্ধা হাতে তরিঘরি আবু সাঈদ কে ধরে ফেলে যেন মাটিতে না পড়ে,

সঙ্গে সঙ্গে আরো চার পাঁচ জন সহযোদ্ধা এসে
দু’জনে দুপায়ে আরো দু’জন দু’হাতে এবং একজন মাথা ধরে নিয়ে যায় হসপিটালে,
ততক্ষণে তাঁর শরীর হয়ে যায় নিথর।

সহযোদ্ধা দের রাগ আরো যায় বেড়ে,
স্বাধীন না করে ফিরলে ঘরে,
বেঈমানি হবে আবু সাঈদ এর দেহের।

হ্যাঁ স্বাধীনতা নিয়েই ঘরে ফিরেছে তাঁর বন্ধুরা,
কষ্ট শুধু একটায় ঘরে ফিরতে হলো তাঁকে ছাড়া।।

ভাবতে অবাক লাগলেও এ’টায় সত্য যে “আবু সাঈদ”কষ্টের চিৎকারটুকু পর্যন্ত দেয় নায়!

তাঁর বুকে গুলি লেগে রক্ত গড়িয়ে পড়ছিলো, তবুও কাউকে সে বুঝাতে পর্যন্ত দেয় নায়।
কারণ একটাই -দেশ স্বাধীন চাই ।।

কি এক কষ্টের আগুন বহিতে ছিলো তাঁর বুকে,

এই তিনটি গুলিতে ঝাঝড়া হয়ে যাওয়ার চেয়েও যে স্বৈরাচারের জুলুম নির্যাতন এবং বাংলাদেশের মানুষের পরাধীনতার কষ্ট,
স্বাধীন ভাবে কথা বলার আতঙ্ক,
ভাষা যেখানে থমকে যাওয়ার পথে,
দেশে কাজ না পেয়ে অন্য দেশে পাড়ি দিচ্ছে মেধাবীরা ভিটে মাটি বিক্রি করে।

যদি এর প্রতিবাদ না করে আজ জুলুম অত্যাচার মেনে নিয়ে ঘরে ফিরে—তবে কেন মাঠে নেমেছে ?

প্রাণে ছিল ধীর্হ বিশ্বাস ,
মরে গিয়ে হলেও ফিরবে সে স্বাধীনতা নিয়ে।

একাত্তরের স্বাধীনতা দেখিনি, তবে শুনেছি, ইতিহাস পড়েছি,
এতো অল্প দিনে কোনো দেশে,
কোনো স্বাধীন দেশের সরকার এতো মানুষকে হত্যা করেছে,
কোথাও কোন ইতিহাসে খুঁজে পাইনি।

গুলি চালাও চালাও আরো গুলি,
রক্তের বন্যাতে পবিত্র হোক ধুলি।।

কেন “আবু সাঈদ” এভাবে বুক পেতে দাঁড়ালো?

কারণ একটাই, এই খুনি স্বৈরাচার হাসিনা সরকারকে নীজের জীবনের বিনিময়ে হলেও হঠাতে হবে।

এই কঠিন সত্য ইঙ্গিত টুকু,
“আবু সাঈদ”এর মনের কথা বুঝতে আর বাকি রইলো না বাঙালির।

স্বাধীন হবেই এদেশ,
“তোমরা থামবেনা”আমার জীবন উৎসর্গ করলাম, স্বাধীনতার জন্য ,—আমার জীবনের বিনিময়ে”।।

———আমি এখানে লক্ষ করলাম শহীদ আবু সাঈদ কালো সার্ট আর কালো পেন্ট পড়ে ছিলো বলে, লাল রক্ত অন্য কেউ দেখতে পাচ্ছিল না। কারণ লাল রং কালোতে বুঝতে পারা যায় না এবং সে যে গুলিবিদ্ধ হয়েছে এটাও কাউকে সে বুঝাতেও চাচ্ছিলো না।

কি এক কঠিন কষ্ট বুকে চাঁপা দিয়ে টিকতে না পেরে যখন সে লুটিয়ে পড়লো,
তার আগ পর্যন্ত কাউকেই সে বুঝতে দিতে চাই নায়!

আমাদের সামনে এতো বড় কঠিন বাস্তব জীবন ত্যাগ!
একাত্তরে হয়েছিলো হয়তবা কিন্তু আমরা চোখে দেখিনি।

এই দুই হাজার চব্বিশে আমাদের চোখের সামনে যা দেখেছি তা মনে হলেই গা শিউরে ওঠে!!

এখন ছাত্রদের কোঠা ঠিক হয়েছে, বাজারের খাদ্য দ্রব্য স্থিতিশীল হয়েছে, কথাবলার বাক্ স্বাধীন হয়েছে, মারো – ধরো – পাক রাও বন্ধ হয়েছে।

ও আল্লাহ তায়ালা, বাংলাদেশের আঠারো কোটি মানুষ শুখে থাকার জন্য, স্বৈরাচার খুনি সরকার থেকে বাঁচাতে বাঙালি স্বাধীন কারি শহীদ আবু সাঈদ কে যেন জান্নাতুল ফেরদৌস দান করো,

হে আল্লাহ, বাংলাদেশের আঠারো কোটি মানুষের আকুতি গ্রহণ করো। তুমি মহান ❤️